মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায়
জিন এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার জটিলতা পারস্পারিক ক্রিয়ার ফলে মস্তিস্কের স্বাভাবিক বিকাশ ও কর্মক্ষমতার বিপর্যয় ঘটলে মানসিক রোগ দেখা দিতে পারে।অন্যভাষা,মানসিক রোগের জিনতত্ত্ব ও সম্ভাব্য ফলাফল সেই ব্যক্তির জৈবিক পারিপার্শিক পরিকাঠোমোর সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত।মানসিক রোগের কারণগুলি প্রায়ই অস্পষ্ট।তত্ত্বগুলি একটি ক্ষেত্র থেকে ফলাফল অন্ত্রর্ভুক্ত করতে পারে।মানসিক রোগ সাধারণত একজন ব্যক্তির আচরণ,মতনৈক্য,অনূভুতি বা মতনৈক্যের সমন্বয় দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়।এটি মস্তিস্কের বিশেষ অঞ্চল বা ফাংশনগুলি্র সাথে যুক্ত হতে পারে,প্রায়ই একটি সামাজিক প্রেক্ষাপটের সাথে তার সংযুক্তি থাকে।মানসিক ব্যাধি মানসিক স্বাস্থ্যের একটি দিক।সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় সেই সাথে সামাজিক নিয়মগুলি মাথায় রেখে এই রোগ নির্ণয় করা উচিত।
মানসিক রোগ দুই ধরনের হতে পারেঃ
১ মৃদু ধরনের মানসিক রোগ। ২ তীব্র ধরনের মানসিক রোগ।
মৃদু ধরনের মানসিক রোগঃএক্ষেত্রে জীবনের স্বাভাবিক অনুভূতিগুলো দুঃখবোধ,দুশ্চিন্তা ইত্যাদি প্রকট আকার ধারণ কর।এক্ষেত্রে যেসব লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হচ্ছে-অহেতুক মানসিক অস্থিরতা দুশ্চিন্তা ভয়ভীতি মাথা ঘোরা,খিচনি,শ্বাসকষ্ট,বুক ধরপর করা,একই চিন্তা বা কাজ বারবার করা,মানসিক অবসাদ,বিষন্নতা,অশান্তি,বিরক্তি,অসহায়বোধ,কাজে মন বসা,স্মরণশক্তি কমে যাওয়া,অনিদ্রা ইত্যাদি।
তীব্র ধরনের মানসিক রোগঃএক্ষেত্রে আচার আচরণ কথাবার্তা স্পষ্টভাবে অস্বাভাবিক হয় ফলে আশেপাশের মানুষেরা এটা বুঝতে পারে।এসময় যেসব লক্ষণগুলো দেখা যায় তা হচ্ছে-অহেতুক মারামারি,ভাংচুর করা,গভীর রাতে বাড়ির বাহিরে চলে যাওয়া,আবোল তাবোল বলা,সন্দেহ প্রবণতা,একা একা হাসা ও কথা বলা,নিজেকে বড় মনে করা,বেশি বেশি খরচ করা,স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি লোপ পাওয়া ইত্যাদি।
মানসিক রোগের লক্ষণগুলো-
- মানসিক রোগের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে,ভুলে যাওয়া,লোকজনকে চিনতে না পারা,মনে রাখতে না পারা,রেগে যাওয়া,ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি।
- মানসিক চাপের কারণে শারীরিকভাবে ও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন তাড়াতাড়ি শ্বাসপ্রশ্বাস,ঘাম ও হাটবিট বেড়ে যাওয়া,মাথাব্যথা,মাথা ঘোরা,বমি বমি ভাব,বদহজম,ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস ইত্যাদি।
- অনেক ধরে নিজেকে সবার কাজ থেকে সরিয়ে রাখা।টানা দুই সপ্তাহে বেশি সময় ধরে মন খারাপ থাকা।অন্যদের সঙ্গে একেবারে কথা বলতে না চাওয়া।সবার সঙ্গে ঝগড়া করা,বেশি উত্তেজিত হয়ে ওঠা।অন্যদের অকারুণে সন্দেহ করতে শুরু করা।গোসল বা দাঁত মাজার মতো নিয়মিত প্রাত্যহিক কাজ করা বন্ধ করে নিজের প্রতি যত্ন না নেওয়া।যেসব কাজে আনন্দ পাওয়া সেসব কাজে নিরানন্দ ও আগ্রহ কমে যাওয়া।সামাজিক সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া।নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করা বা নিজেকে দায়ী দায়ী মনে হওয়া সবকিছুতে।খাবারে অরুচি তৈরি হওয়া।
- মানসিক স্বাস্থ্য ও মনমেজাজ ভালো রাখতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি,এসিডযুক্ত খাবার খাওয়া উপকারী।
- আমরা সাধারণত যেকোন ধরনের বেদনাদায়ক ও কষ্টদায়ক উদ্দীপক এবং পরিবেশ থেকে মুক্তি চাই কিংবা এড়িয়ে যেতে চাই।পলায়নপর এই প্রবণতা অনেক সময় নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনে।কারণ,বাস্তবতা যতই প্রতিকূল হোক না কেন,তাকে অস্বীকার করে সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।বরং উল্টো বিভিন্ন মানসিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।তাই বর্তমান করোনা সংকটে এড়িয়ে না গিয়ে বরং চলমান জীবনের একটি অংশ হিসেবে স্বীকার করে নিতে হবে প্রথমেই।সেখান থেকে একটি ইতিবাচক অর্থ তৈরি করার মাধ্যমে আমরা মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারি।
- অনিশ্চয়তার কারণে আমাদের মধ্যে ভয়,উদ্বিগ্নতা কাজ করবে,এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু এই সব ভয় ও উদ্বিগ্নতাকে নিজের ব্যক্তিত্বের এবং আত্নপরিচয়ের অংশ মনে করবেন ন।অর্থাৎ বিদ্যমান ভয় ও উদ্বিগ্নতা মানেই আপনি নন।এই ধরনের ভয় ও উদ্বিগ্নতা হলো পূর্ব অভিজ্ঞতাবিহীন ও অনিশ্চত পরিস্থিতির প্রতি আপনার শরীর মনের স্বয়ংক্রিয়,ক্ষণস্থায়ী ও স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।তাই এগুলোকে মন থেকে দূর না করে শান্তভাবে মেনে নিতে হবে এবং সেগুলোর উপর কোন ধরনের ব্যক্তিগত অর্থ আরোপ না করে,নিজেকে আনন্দদায়ক বা বাড়ির দৈনদিন কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে।এতে বিদ্যমান ভয় ও উদ্বিগ্নতার প্রভাব ধীরে ধীরে কমে যাবে।
- মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর আরেকটি কার্যকর উপায় হলো নিজের মনকে অতীত ও ভবিষ্যতের দিকে না পাঠিয়ে বর্তমানের চলমান মূহুর্তের ভেতর ধরে রাখার চেষ্টা করা।এটা একটু কঠিন কারণ,আমাদের মন সব সময় আতীত চিন্তা ও কিছুক্ষণ ভবিষ্যৎ চিন্তার ভেতর লাফালাফি করে।মন যখন আতীতের কোন বিষয়ের প্রতি বেশি একাত্ন হয়ে যায় তখন আমাদের ভেতর বিষন্নতা তৈরি হয়।আর যখন ভবিষ্যতের প্রতি বেশি একাত্ন হয়ে যায়,তখন আমাদের উদ্বিগ্নতা তৈরি হয়।মাত্রাতিরিক্ত অতীত ও ভবিষ্যতের চিন্তা অপরাধ বোধ ও আতঙ্ক তৈরি করে।তাই মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমাদের মনকে সব সময় আমাদের দেহের ভেতর রাখতে হব।কারণ আমাদের দেহ সব সময় বর্তমানেই বাস করে।
- যখন যে কাজটা করছি,তখন মনকে ঠিক ঐ কাজের ভেতর আবদ্ধ রাখার চেষ্টা করতে হবে।এ ছাড়া নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের ওপর মনোযোগ রেখে অথবা শ্বাস প্রশ্বাসের সময় তলপেটের যে ওঠা নামা হয়,সেটার প্রতি মনোযোগ রেখে প্রতিদিন সকালে বিকালে ও রাতে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট করে ধ্যান করার চেষ্টা করুন।কারণ ধ্যান আপনার মনকে বর্তমানের মধ্যে ধরে রাখার সক্ষমতা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে দেয় এবং আপন মনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানান দেয়।
- পরিবারের সদস্য আত্নীয়স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীর সঙ্গে অকৃত্রিম বন্ধন তৈরি করা এবং বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।কারণ ইতিবাচক সম্পর্ক মনকে সব সময় সতেজ রাখে এবং মনের পজিটিভ এনার্জি বাড়িয়ে দেয়।যতটুকু সম্ভব মানুষকে আন্তরিকভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করতে হবে।এতে মানুষের একাত্নতা বাড়ে।একাত্নতা মানুষের একাকিত্বের অনুভূতি দূর করতে সাহায্য করে।
- প্রতিদিন ছোটখাটো কোন সৃজনশীল কাজ করার চেষ্টা করতে হবে।এতে আত্নবিশ্বাস বাড়ে।পারিপার্শ্বিক চাপ মোকাবিলার কৌশল হিসেবে কোনো ধরনের মাদকদ্রব্য ও মাত্রাতিরিক্ত চা-কফি পান করা যাবে না।যেসব বাহ্যিক ও অভ্যন্তীণ উৎস থেকে চাপ তৈরি হচ্ছে,সেই সব উৎসকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে চিহ্নিত করতে হবে।মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী যেসব উপাদান বর্তমান মোকাবিলা করা সম্ভব সেগুলোকে যৌত্তিক মন দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।আর যেসব উপাদানকে আপাতত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়,সেগুলো চিন্তার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে এবং এড়িয়ে চলতে হবে।এতে আপনার আত্ননিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বাড়বে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url