নাটোর রাজবাড়ির ইতিহাস--নাটোর রাজবাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা।
নাটোর রাজবাড়িঃ নাটোর সদর উপজেলায় অবস্থিত একটি রাজবাড়ি,যা নাটোর রাজবংশের একটি স্মৃতিচিহ্ন ।
- ভূমিকা
- ইতিহাস
- রাজবাড়ির নির্মাণ
- রাজবাড়ির বর্ণনা
- যুবপার্ক
রাজবাড়ির ইতিহাসঃ
অষ্টাদশ শতকের শুরুতে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি হয়। ১৭০৬ সালে পরগণা বানগাছির জমিদার গণেশ রায় ও ভবানী চরণ চৌধুরী রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হয়ে চাক্রিচ্যুত হন।দেওয়ান রঘুনন্দন জমিদারটি তার ভাই রাম জীবনের নামে বন্দোবস্ত নেন।এভাবে নাটোর রাজবংশের পত্তন হয়।রাজা রাম জীবন চৌধুরী নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন ১৭০৬ সালে,মতান্তরে ১৭১০ সালে। ১৭৩৪ সালে তিনি মারা যান।১৭৩০ সালে রাণী ভবানীর সাথে রাজা রাম জীবনের দত্তক পুত্র রামকান্তের বিয়ে হয়।রাজা রাম জীবনের মৃত্যুর পরে নবাব আলীবদী খাঁ রাণী ভবানীর ওপর জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন।রাণী ভবানীর রাজত্বকালে তার জমিদারি বর্তমান রাজশাহী,পাবনা বগুড়া,কুষ্টিয়া,যশোর,রংপুর,পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ,বীরভুম,মালদহ জেলা পর্যন্ত বিচরণ ছিল।
রাজবাড়ির নির্মাণ-
বিশাল জমিদারির রাজধানী নিজ জন্মভূমিতে স্থাপনের নিমিত্তে রঘুনন্দন রাম জীবন ও পন্ডিতবর্গ তৎকালীন ভাতঝাড়া বিলকে নির্বাচন করেন।ভাতঝাড়ার বিল ছিল পুঠিয়া রাজা দর্পনারায়ণের সম্পত্তি।এজন্য রঘুনন্দন ও রামজীবন রাজা দর্পনারায়ণের নিকটে বিলটি রায়তী স্বত্বে পত্তনীর আবেদন করেন।নতুন রাজাকে রাজা দর্পনারায়ণ জমিটি ব্রহ্মোত্তোর দান করেন।রাম জীবন বিলে দীঘি পুকুর ও চৌকি খনন করে সমতল করেন এবং রাজবাড়ি স্থাপন করেন।এলাকাটির নামকরণ করেন নাট্যপুর। ১৭০৬-১৭১০ সালে নাটোর রাজবাড়ি নির্মিত হয়েছিল।রঘুনন্দন বড়নগরে(মুর্শিদাবাদে)থাকতেন।
রাজবাড়ির বর্ণনা-
রাজবাড়ির মোট আয়তন ১২০ একর।ছোট বড় ৮ টি ভবন আছে। ২টি গভীর পুকুর ও ৫ টি ছোট পুকুর আছে।রাজবাড়ি বেষ্টন করে আছে দুই স্তরের বেডচৌকি।পুরো এলাকা ২টি অংশে বিভক্ত ছোট তরফ ও বড় তরফ।রাজবাড়ির উল্লেখযোগ্য মন্দিরগুলো হল শ্যামসুন্দর মন্দির আনন্দময়ী কালিবাড়ি মন্দির তারকেশের শিব মন্দির।সাতটি ব্লকের মধ্যে মাত্র চারটিকে মোটামুটি সংস্কার করে বর্তমানে জেলা প্রশাসনে্র বিভিন্ন অফিস হিসেবে ব্যবহত হচ্ছে।আর বাকিগুলো আকারহীন বিচ্ছিন্ন কাঠামোর ধ্বংস।একতলা বিশিষ্ট উত্তর ব্লকটি বর্তমানে ব্যবহ্যত হচ্ছে ডেপুটি কমিশনারের অফিস হিসেবে।এর ঠিক সামনে অর্থাৎ দক্ষিণে রয়েছে একটি বেশ বড় উন্মক্ত লন।এ লনের দক্ষিণ ও পশ্চিমে রয়েছে ইংরেজি ইউ অক্ষরের আকৃতিতে দুটি ব্লক যেগুলির পূর্ব পার্শ্বে রয়েছে ফাকাঁ জায়গা।উত্তরের প্রধান ব্লকটি সন্মুখভাগ প্রায় ৩০.৪৮ মিটার বিশিষ্ট।এর ঠিক মাঝামাঝিতে রয়েছে একটি লক্ষণীয়ভাবে অভিক্ষিপ্ত পোর্চ আর দুপ্রান্তে রয়েছে সামান্য বর্ধিত দুটি বে এবং এদের উপরে আছে ত্রিভুজাকৃতির পেডিমেন্ট।জাঁকালো কেন্দ্রীয় পোর্চ ও সামনের বারান্দার ভার বহন করছে সারিবদ্ধভাবে স্থাপিত সেমি কোরেনথিয়ান রীতিতে তৈরি স্তম্ভ ও ক্লাসিক্যাল রোমান ফ্যাশনে ভাগ ভাগ করে নির্মিত বিচ্ছিন্ন খিলানসমূহ।এ ব্লকে রয়েছে ঠিক কেন্দ্রে স্থাপিত একটি বিশাল অভ্যর্থনা হল ও একে ঘিরে এগারোটি বৃহৎ কক্ষ।কেন্দ্রীয় হলটির (১৮.২৯ মি*৯.১৪মি)সিলিং ৯.১৪ মিটার উচু হলে আলো প্রবেশ করার জন্য রয়েছে রঙিন কাঁচের গ্লাসে নির্মিত দেওয়ালের উপরের দিকে স্থাপিত ছাদসংলগ্ন ১৮ টি জানালা।কিছু কিছু স্তম্ভের শীর্ষে শোভাবর্ধক রয়েছে ক্লাসিক্যাল নগ্ন নারী ভাস্ক্রর্য।পশ্চিমের ৬০.৯৬ মিটার দীর্ঘ এক তলা ব্লকটিও কেন্দ্রে খিলান বিশিষ্ট অভিক্ষিপ্ত বে সমৃদ্ধ।সামনের খোলা বারান্দাটির সমস্তটি জুড়ে রয়েছে সারিবদ্ধ ডোবিক রীতির স্তম্ভ।ব্লকটির পেছনে রয়েছে একটি মন্ডপ,নাচ ঘর এবং তারও পেছনে আরও পশ্চিমে আছে একটি কৃষ্ণ মন্দির।এ পারিবারিক মন্দিরটি প্রায় ১৫.২৪ মিটার প্রশস্ত বারান্দা।এ ব্লকের ঠিক সমকোণে নির্মিত হয়েছে উত্তরমুখী আর একটি এক তলা বিল্ডিং যার সন্মুখভাগ ৪৫.৭২ মিটার প্রশস্ত।অভিক্ষিপ্ত কেন্দ্রীয় পোর্চ ও তদসংলগ্ন বারান্দা এবং এগুলির পেছনে রয়েছে সারিবদ্ধ কক্ষ।ব্লকটির পাশেই রয়েছে একটি আগাছাচ্ছন্ন দিঘি।ব্লকটির পশ্চাৎ ভাগ প্লাস্টারের সাহায্যে তৈরি নকশায় অলংকৃত।বর্তমানে এ ভবন পুলিশের সুপারিনটেন্ডেন্ট এর অফিস হিসেবে ব্যবহ্যত হচ্ছে।এর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ঐ একই দিঘির পাশেই দৈব্যক্রমে টিকে আছে আরও দুটি ভবন।এদের মধ্যে ছোটটি ১৫.২৪ মিটার চওড়া।এর বারান্দায় রয়েছে সারিবদ্ধ ডোরিক রীতির জোড়া স্তম্ভ।বড়টি ৩০.৪৮ মিটার প্রশস্ত এবং এর বারান্দাটি দাঁড়িয়ে আছে সেমি-কোরিনথিয়ান স্তম্ভের উপর।দুটি ভবনই এখন ঘনঝোপ ও ধ্বংসাশেষে ঢাকা।তবে পরিত্যক্ত দিঘিটির পশ্চিম পাড়ে চিত্রের ন্যায় উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত ছোট-তরফ ভবনের মূল ব্লকটি একটি মনোরম ভবন যা বর্তমানে জেলা জজ কোট হিসেবে ব্যবহ্যত হচ্ছে.২১.৩৪ মিটার ফাসাদের ভবনটিতে রয়েছে তিনটি খিলানবিশিষ্ট,একটি অভিক্ষিপ্ত বর্ধিত বারান্দা।ভবন কেন্দ্রে রয়েছে একটি বিশাল অভ্যর্থনা হল যা পার্শতবতী অন্যান্য অংশ থেকে উঁচু।এর র্শীষে রয়েছে পিরামিডাকৃতির ছাদ এবং আলো প্রবেশের জন্য ছাদসংলগ্ন জানালা।পোর্চের প্যারাপেটকে অলংকৃত করা হয়েছে প্লাস্টারের সাহায্যে ফুলেল,লতাপাতা ও নব-যুগীয় ভাস্ক্রর্যের মিশেলে ফ্রিজ নকশায়।ভবনের দুপ্রান্তে রয়েছে দুটি ছোট অভিক্ষেপের বর্ধিত।এগু্লি আবার অলংকৃত হয়েছে দুজোড়া কোরিনথিয়ান স্তম্ভ ও উপরে দেওয়ালের ত্রিভুজাকৃতি অংশ দ্বারা এ ভবনে রয়েছে দুটি বিশাল হল ঘরসহ মোট পনেরোটি কক্ষ।
যুবপার্ক-
১৯৮৬ সাল থেকে রাজবাড়ির পুরো এলাকাটি রানী ভবানী কেন্দ্রীয় উদ্যান বা যুবপার্ক হিসেবে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url