OrdinaryITPostAd

সুন্দরবন সম্পর্কে ১০ টি বাক্য - সুন্দরবন কত শতাংশ বাংলাদেশের

 সুন্দরবন-বাংলায় সুন্দরবন এর আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দরবন বনভূমি।সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে,যা সেখানে প্রচুর জন্মায়।অন্যান্য সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এরকম হতে পারে যে,এর নামকরণ হয়তো হয়েছে "সমুদ্র বন"বা "চন্দ্র-বান্ধে"প্রাচীন আদিবাসী থেকে।তবে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে সুন্দরী গাছ থেকেই সুন্দরবনের নাকরণ হয়েছে।সুন্দরবন স্থায়ীভাবে বাদা বা,হুলোবন,শুলোবন,মাল,মহাল হিসেবে পরিচিত।বাদা মানে জোয়ার ভাটা বয়ে যায় যে বনে।ব্রিটিশ উপনিবেশের সময় এই বাদার নাম হয়ে যায় মহাল,মধুমহাল,গোলমহাল।


সূচিপত্রঃ

  • ভূমিকা
  • সুন্দরবনের ইতিহাস
  • সুন্দরবনের ভৌগোলিক গঠন
  • জীবমন্ডল
  • স্বাদুজলের জলাভূমির বনাঞ্চল
  • দর্শনীয় স্থান
  • সুন্দরবন সম্পর্কে ১০টি বাক্য
  • সুন্দরবন ভ্রমণের উপায়
  • সুন্দরবন ভ্রমণ প্যাকেজ খরচ
  • সুন্দরবন যাওয়ার উপায়
  • কম খরচে একদিন সুন্দরবন ভ্রমণ
  • কোথায় থাকবেন

সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম।পদ্মা,মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকায় বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা,সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় কিছু অংশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুরে আছে।সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন সর্ববৃহৎ অখন্ড বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার ৬৬% রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ ৩৪% রয়েছে ভারতের মধ্যে।

সুন্দরবন ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ বস্তত একই নিরবিচ্ছিন্ন ভূমিখন্ডের সন্নিহিত অংশ হলেও ইউনোস্কোর  বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ হয়েছে,যথাক্রমে 'সুন্দরবন' ও 'সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান'নামে। এই সুরক্ষা সত্ত্বেও আইইউসিএন রেড লিস্ট অফ ইকোসিস্টেম ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে ২০২০ সালের মূল্যায়নে ভারতীয় সুন্দরবনকে বিপন্ন বলে মনে করা হয়েছিল।সুন্দরবন জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা,কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা।মোট বনভুমির ৩১.১ শতাংশ,অর্থাৎ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা,খাঁড়ি,বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ বনভূমিটি,স্বনামে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরনের পাখি,হরিণ,কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত।জরিপ মোতাবেক ১০৬ বাঘ ও ১০০০০০ থেকে ১৫০০০০ হরিণ রয়েছে এখন সুন্দরবন এলাকায়।১৯৯২ সালে ২১ মে সুন্দরবন রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।সুন্দরবনে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসে।প্রতি বছর দেশ বিদেশের অসংখ্য পর্যটক সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দয্যে মুগ্ধ হয়ে সুন্দনবন ভ্রমণ করার মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করে।

সর্বাধিক প্রচুর গাছের প্রজাতি হল সুন্দরী এবং গেওয়া।বনে ২৯০টি পাখি,১২০টি মাছ,৪২টি স্তন্যপায়ী,৩৫টি সরীসৃপ এবং ৮টি উভচর প্রজাতিসহ ৪৫৩টি প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বাসস্থান রয়েছে।মাছ এবং কিছু অমেরুদন্ডী প্রাণী ছাড়া অন্য বন্যপ্রাণী হত্যা বা দখলের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মনে হচ্ছে বিংশ শতাব্দীতে হ্রাস প্রাপ্ত জীববৈচিত্র বা প্রজাতির ক্ষতির একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ প্যাটার্ন রয়েছে এবং বনের পরিবেশগত গুনমান হ্রাস পাচ্ছে।পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানের প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বন অধিদপ্তর।বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে বন সংরক্ষণের জন্য একটি বন চক্র তৈরি করা হয় এবং এরপর থেকে প্রধান বন সংরক্ষকদের নিযুক্ত করা হয়েছে।উভয় সরকারের কাছ থেকে সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সুন্দরবন প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট উভয় কারণে হুমকির মুখে রয়েছে। ১৯৭০ সালে সালের ভোলা ঘূর্ণিঝড়,এই ঘূর্নিঝড়কে গ্রেট সাইক্লোন নামেও ডাকা হয়।এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়.১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়,এই ঘুর্ণিঝড়েও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২০০৭ সালে ঘুর্ণিঝড় সিডরের ভূমিধ্বসের কারণে প্রায় ৪০% সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি এবং স্বাদুপানির সরবরাহের হ্রাসের কারণে বুনটি বর্ধিত সালিনিটিতে ও ভুগছে।আবার ২০০৯ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আইলা ব্যাপক হতাহতের সাথে সুন্দরবনকে বিধস্ত করে।এই ঘূর্ণিঝড়ে কমপক্ষে ১,০০,০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০২৩ সালের মোখা ঘূর্ণিঝড় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।প্রস্তাবিত কয়লা চালিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র টি বাংলাদেশের খুলনার বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায় সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার ৮.৭ মাইল উত্তরে অবস্থিত,ইউনেস্কোর ২০১৬ সালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে এই অনন্য ম্যানগ্রোভ অরন্যের আরও ক্ষতি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে

ইতিহাসঃ

মুঘল আমলে,১২০৩-১৫৩৮ স্থানীয় এক রাজা পুরো সুন্দরবন ইজারা নেন।ঐতিহাসিক আইনি পরিবর্তনগুলোয় কাঙ্ক্ষিত যেসব মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের প্রথম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক তত্ত্বাবধানের অধীনে আসা। ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর এর কাছ থেকে স্বত্বাধিকার পাওয়ার পরপরই সুন্দরবন এলাকার মানচিত্র তৈরি করা হয়।বনাঞ্চলটি সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আসে। ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভারতের    তৎকালীন বাংলা প্রদেশে বন বিভাগ স্থাপনের পর থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন বর্তমানে প্রায় দ্বিগুণ ছিল।বনের উপর মানুষের অধিক চাপ ক্রমান্বয়ে এর আয়তন সংকুচিত করেছে। ১৮২৮ সালে ব্রিটিশ সরকার সুন্দরবনের স্বত্ত্বাধীকার অর্জন করে।এল,টি হজেয ১৮২৯ সালে সুন্দরবনের প্রথম জরিপ কার্য পরিচালনা করেন। ১৮৭৮ সালে সমগ্র সুন্দরবন এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় সুন্দরবনের ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে পড়ে যা বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় ৪.৩% এবং সমগ্র বনভূমির প্রায় ৬৬% ।

সুন্দরবনের উপর প্রথম বন ব্যবস্থাপনা বিভাগের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। ১৯৬৫ সালের বন আইন ধারা-৮ মোতাবেক সুন্দরবনের একটি বড় অংশকে সংরক্ষিত বনভূমি হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয় ১৮৭৫-৭৬ সালে। পরবর্তী বছরের মধ্যেই বাকী অংশও সংরক্ষিত বনভূমির স্বীকৃতি পায়।এর ফলে দূরবর্তী বেসামরিক জেলা প্রশাসনের কর্তৃত্ব থেকে তা চলে যায় বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে।পরবর্তীকালে ১৮৭৯ সালে বন ব্যবস্থাপনার জন্য প্রসাশনিক একক হিসেবে বন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়,যার সদর দপ্তর ছিল খুলনায়।সুন্দরবনের জন্য ১৮৯৩-৯৮ সময়কালে প্রথম বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণীত হয়।

১৯১১ সালে সুন্দরবনকে ট্র্যাক্ট আফ ওয়াস্ট ল্যান্ড হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়,যা না তো কখনো জরিপ করা হয়েছে আর না তো কোনদিন শুমারীর অধীনে এসেছে।তখন হুগলীর নদীর মোহনা থেকে মেঘনা নদীর মোহনা পর্যন্ত প্রায় ১৬৫ মাইল ২৬৬ কিঃমিঃ এলাকা জুড়ে এর সীমানা নির্ধারিত হয়।

ভৌগোলিক গঠনঃ

পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ তিনটি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে একটি হসেবে গঙ্গা অববাহিকায় অবস্থিত সুন্দরবনের বাস্তসংস্থান যথেষ্ট জটিল।দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ এবং ভারত জুড়ে ছড়িয়ে আছে সুন্দরবনের বৃহত্তর অংশটি ৬৬% বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত।দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পূর্বে বলেশ্বর নদী আর উত্তরে বেশি চাষ ঘনত্বের জমি বরাবর সীমানা।উঁচু এলাকায় নদীর প্রধান শাখাগুলো ছাড়া অন্যান্য জলধারাগুলো সর্বত্রই বেড়িবাধঁ ও উঁচু নিচু জমি দ্বারা বহুলাংশে বাঁধাপ্রাপ্ত।প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবনের আয়তন হওয়ার কথা ছিল প্রায় ১৬,৭০০ বর্গ কিলোমিটার ২০০ বছর আগের হিসাবে।কমতে কমতে এর বর্তমান আয়তন হয়েছে পূর্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের সমান।বর্তমানে মোট ভূমির আয়তন ৪,১৪৩ বর্গ কিলোমিটার বালুতট ৪২ বর্গকিলোমিটার এর আয়তনসহ এবং  নদী,খাঁড়ি,ও খালসহ বাকি জল্ধারায় আয়তন ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার।সুন্দরবনের নদীগুলো নোনা পানি ও মিঠা পানি মিলন স্থান।সুতরাং গঙ্গা থেকে আসা নদীর মিঠা পানির,বঙ্গোপসাগরের নোনা পানি হয়ে ওঠার মধ্যবর্তী স্থান হলো এলাকাটি।এটি বাংলাদেশে সাতক্ষীরা,খুলনা,,বাগেরহাট ও পশ্চিমবঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা জুড়ে রয়েছে।বাংলাদেশে দক্ষিণ পশ্চিমে ও ভারতে দক্ষিণ পূর্বে সুন্দরবন অবস্থিত।হাজার বছর ধরে বঙ্গোপসাগর বরাবর আন্তঃস্রোতীয় প্রবাহের দরুন প্রাকৃতিকভাবে উপরিস্রোত থেকে পৃথক হওয়া পলি সঞ্চিত হয়ে গড়ে উঠেছে সুন্দরবন।এর ভৌগোলিক গঠন ব-দ্বীপীয় যার উপরিতলে রয়েছে অসংখ্য জলধারা এবং জলতলে ছড়িয়ে আছে মাটির দেয়াল ও কাদা চর।এতে আরো রয়েছে সমুদ্র সমতলের গড় উচ্চতার চেয়ে উঁচুতে থাকা প্রান্তীয় তৃণভূমি,বালুতট এবং যেগুলো জুড়ে জালের মতো জড়িয়ে আছে খাল,জলতলের মাটির দেয়াল,আদি ব-দ্বীপীয় কাদা ও সঞ্চিত পলি।সমুদ্রসমতল থেকে সুন্দরবনের উচ্চতা স্থানভেদে ০.৯ মিটার থেকে ২.১১ মিটার।


জীবমন্ডলঃ

সুন্দরবনে দুই ধরনের জীবমন্ডলের অস্তিত্ব দেখা যায় -স্বাদুপানি জলাচূমির বনাঞ্চল এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল।

স্বাদুজলের জলাভূমির বনাঞ্চলঃ

সুন্দরবনের স্বাদুজল জলাভূমির বনাঞ্চল বাংলাদেশের ক্রান্তীয় আর্দ্র-সপুস্পক বনের অন্তর্গত।এ ধরনের বন নোনাজলযুক্ত জলাভূমির উদাহরণ স্বাদু-জলের জীবমন্ডলের জল সামান্য নোনা এবং বর্ষাকালে এই লবণাক্ততা কিছুটা হ্রাস পায়,বিশেষ করে যখন গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদের জলের কারণে নোনাজল দূর হয় এবং পলিমাটির পুরু আস্তরণ জমা হয়।

দর্শনীয় স্থানঃ

জামতলা সমুদ্র সৈকত--

জামতলায় একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে,এই টাওয়ার থেকে সুন্দরবনের সৌন্দর্য্যের কিছুটা অংশে একসাথে চোখ বুলানো যায়।আর ভাগ্য ভাল থাকলে এখান থেকে হরিণ কিংবা বাঘের দেখা পাওয়া যেতে পারে।

মান্দারবাড়িয়া সৈকত-

মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের কিছুটা অংশ এখন ও অনাবিস্কৃত বলে মনে করা হয়।এখান থেকে সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত দেখা যায়।এখানে যেতে হলে সাতক্ষীরা দিয়ে সুন্দরবন যেতে হবে।

হিরণ পয়েন্ট--

হিরণ পয়েন্টের কাঠের তৈরি সুন্দর রাস্তা হাঁটতে হাঁটতে হরিণ,বানর,গুইসাপ ও কুমির দেখা পাওয়া যায় এখানে মাঝে মাঝে বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলে।

দুবলার চর-

সুন্দরবন এলাকার মধ্যে ছোট একটি চর হচ্ছে দুবলার চর।দুবলার চরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী গিয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে।হিন্দুধর্মের পূন্যস্নান,রাসমেলা এবং শুটকির জন্য বিখ্যাত। অক্টোবর থেকে ফেব্রয়ারী এই পাঁচ মাস প্রায় ১০ হাজারের মত জেলে সাময়িক বসতি গড়ে সেখানে।মাছ ধরার সঙ্গে  চলে শুঁটকি শুকানোর কাজ।

কটকা সমুদ্র সৈকত-

কটকা সমুদ্র সৈকত অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর।এখানে বেলাভূমি জুড়ে আঁকা থাকে লাল কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম।কটকা ফরেষ্ট ষ্টেশনের দক্ষিণে বংগপসাগর।আর সাগর কোল ঘেষেই কটকা আভায়ান্যটি।কটকায় সবচেয়ে চমৎকার যে বিষয়টি তা হলো এখানে দেখা মিলবে বন্য হরিণ দলের সাথে।এখানে আছে বনের ভিতর একটি কাঠের ট্রেইল।কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে ট্রেইল ধরে মিনিট ১৫ হাটলেই দেখা যাবে হরিণের দল।

করমজল-

মংলা থেকে সবচেয়ে কাছে অবস্থিত করমজল,বনের গভীরে একটি রেঞ্জার স্টেশন যা হরিণ প্রজনন কেন্দ্রে হিসেবে কাজ করে।এখানে আছে বনের ভিতর দিয়ে যাওয়া কাঠের পুলের ট্রেইল,হরিণ,কুমির,বানর সহ নানা প্রজাতির গাছ গাছালি।সুন্দরবন গহীনে যদি পশু-পাখি দেখার সুযোগ না হয়ে থাকে,তবে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাবে করমজলে।

হারবাড়িয়া--

সুন্দরবনের অন্যতম একটি ইকো-পর্যটন কেন্দ্র।মোংলা থেকে দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার।এখানে মূল আকর্যণ বনের ভিতর দিয়ে যাওয়ার কাঠের ট্রেইল।পুরো ট্রেইলটা ঘুরে আসতে ৩০ মিনিটের মত সময় লাগে।এখানে একটি পদ্মাপুকুর ও ওয়াচ টাওয়ার আছে।ওয়াচ টাওয়ার থেকে পুরো হাড়বাড়িয়া দেখা যায়।বনেরভিতরের কাঠেরপুল দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় যে কারোই অ্যাডভেঞ্চার ও শিহরণ জেগে উঠবে।

সুন্দরবন সম্পর্কে ১০ টি বাক্যঃ

  • সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যাংগ্রোভ বনভূমি
  • ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্বে ঐতিহ্য ঘোষণা করে।
  • সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত
  • সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় দ্বীপ সাগরদ্বীপ
  • সুন্দরবনে ১২০ প্রজাতির মাছ আছে
  • সুন্দরবনে প্রায় ৪৫০ প্রজাতির প্রাণী আছে
  • বাংলাদেশে সুন্দরবনের আয়তন ৬৬ শতাংশ পড়েছে
  • সুন্দরবনের অপর নাম হচ্ছে গরান বন
  • সুন্দরবন একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র
  • সুন্দরবন আটটি উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত


সুন্দরবন ভ্রমণের উপায়ঃ

আপনি চাইলে একা বা ২-৩ জন গ্রুপ করে সুন্দরবনের গহীনে ঘুরতে যেতে পারবেন না।আর সবগুলো স্থান ঘুরে দেখতে লঞ্চ ও শীপ ছাড়া বিকল্প কিছু নেই।নিরাপত্তা অনুমতি খরচ আর জটিল প্রক্রিয়ার কারণে সুন্দরবন ভ্রমণের সবচেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী উপায় হচ্ছে কোন ট্যুর অপারেটরের সাথে যাওয়া।প্যাকেজের মধ্যেই শীপে উঠার পর থেকে ট্যুর শেষ করে ঘাটে ফেরা পর্যন্ত থাকার ব্যবস্থা, সকাল বেলার খাবার,বন বিভাগের অনুমতি,নিরাপত্তা রক্ষী ও গাইড সহ সকল যাবতীয় খরচ অন্ত্রর্ভুক্ত থাকে।

সুন্দরবন ভ্রমণ প্যাকেজ খরচঃ

সুন্দরবন ভ্রমণ প্যাকেজ এর খরচ নির্ভর করে জাহাজ ও খাবারের মান,কি কি ঘুরে দেখাবে ও কতদিনের ট্যুর তার উপর।মোটামুটি মানের শীপে ঘুরতে জন প্রতি খরচ হবে ৭০০০-১৬০০০ টাক আর বিলাসবহুল টুরিষ্ট ভ্যাসেলে খরচ ২০০০০-৩০০০০ টাকা।প্যাকেজ গুলো সাধারণত ২ রাত ৩ দিন অথবা ৩ রাত ৪দিনের হয়ে থাকে।

সুন্দরবন যাওয়ার উপায়ঃ

সুন্দরবন যেতে চাইলে খুলনা হয়ে যাওয়া যায় অথবা মোংলা থেকে যাওয়া যায়।এই দুইটি পথই সবচেয়ে জনপ্রিয়।আর খুলনা থেকে ছেড়ে যাওয়া শীপ মোংলা হয়েই সুন্দরবন প্রবেশ করে।

কম খরচে একদিনে সুন্দরবন ভ্রমণঃ

ডে ট্যুর দিতে চান তাহলে মোংলা থেকে করমজল অথবা হারবাড়িয়া পর্যটন কেন্দ্র  ঘুরে দেখতে পারেন।মোংলা থেকে খুব সকালে রওনা দিলে দূটো জায়গাও একদিনে ঘুরে দেখা সম্ভব।করমজল ও হারবাড়িয়া দুই জায়গায় যেতে ভাড়া লাগবে ৫০০০-১০০০০ টাকা পর্যন্ত।

কোথায় থাকবেনঃ

শীপে বা লঞ্চে ঘুরতে গেলে সেখানেই থাকার ব্যবস্থা থাকে।এছাড়া ব্যক্তিগত ভাবে ভ্রমণ করলে সুন্দরবনের টাইগার পয়েন্টের কচিখালি,হিরণ পয়েন্টের নীলকমল এবং কটকায় বন বিভাগের রেষ্টহাউজে থাকার জন্য ব্যবস্থা রয়েছে।












এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪